কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার হল একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা ডেটা প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম এবং নির্ধারিত নির্দেশনা অনুযায়ী ফলাফল প্রদান করে। এটি ডেটা ইনপুট নেয়, প্রক্রিয়াকরণ করে এবং আউটপুট হিসেবে ফলাফল প্রদর্শন করে।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ
কম্পিউটার বিভিন্ন শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী ভাগ করা যায়।
১. কাজের ধরন অনুযায়ী:
- অ্যানালগ কম্পিউটার: পরিমাপযোগ্য ভৌত মান প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হয়।
- ডিজিটাল কম্পিউটার: সংখ্যাসূচক ডেটা প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হয়।
- হাইব্রিড কম্পিউটার: অ্যানালগ ও ডিজিটালের সমন্বয়ে কাজ করে।
২. আকার ও ক্ষমতা অনুযায়ী:
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার: বড় আকারের, উচ্চ ক্ষমতার এবং বহু ব্যবহারকারী সমর্থিত।
- সুপার কম্পিউটার: অত্যন্ত শক্তিশালী এবং গবেষণা ও সিমুলেশন কাজে ব্যবহৃত হয়।
- মিনিকম্পিউটার: মাঝারি ক্ষমতার এবং তুলনামূলক ছোট কাজের জন্য।
- মাইক্রোকম্পিউটার (পার্সোনাল কম্পিউটার): একক ব্যবহারকারীর জন্য ডিজাইন করা।
৩. ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী:
- ডেস্কটপ: ডেস্কে স্থাপন করে ব্যবহৃত হয়। ডেস্কটপ কম্পিউটার একটি পার্সোনাল কম্পিউটার যা স্থায়ীভাবে ডেস্কে স্থাপন করে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি সাধারণত মনিটর, সিপিইউ, কীবোর্ড এবং মাউসের সমন্বয়ে গঠিত। ডেস্কটপ কম্পিউটার উচ্চ ক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার এবং কাস্টমাইজেশনের জন্য উপযুক্ত। এটি ভিডিও এডিটিং, প্রোগ্রামিং এবং গেমিংয়ের মতো ভারী কাজের জন্য দক্ষ। হার্ডওয়্যার সহজেই আপগ্রেড করা যায়, যা এটিকে আরও ব্যবহার উপযোগী করে তোলে। তবে এটি বহনযোগ্য নয় এবং বিদ্যুৎ সংযোগে নির্ভরশীল। ডেস্কটপ কম্পিউটার মূলত অফিসিয়াল কাজ, গেমিং এবং গবেষণায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
- ল্যাপটপ: সহজে বহনযোগ্য। একটি পোর্টেবল কম্পিউটার যা সহজে বহনযোগ্য এবং ডেস্কটপের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি মনিটর, কীবোর্ড, টাচপ্যাড (মাউস), এবং সিপিইউ একত্রিত করে একটি কমপ্যাক্ট ডিজাইন তৈরি করে। ল্যাপটপ ব্যাটারি এবং বিদ্যুৎ উভয়ের মাধ্যমে কাজ করতে সক্ষম, যা ভ্রমণ, অফিস, শিক্ষা এবং বিনোদনের জন্য আদর্শ। এর প্রধান সুবিধা হলো বহনযোগ্যতা, কম জায়গায় স্থাপনযোগ্যতা, এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াও কাজ করার সুবিধা। তবে, এটি ডেস্কটপের তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল এবং হার্ডওয়্যার আপগ্রেড সীমিত। ল্যাপটপ ডেল, এইচপি, লেনোভো এবং অ্যাপলের মতো ব্র্যান্ডের মাধ্যমে জনপ্রিয়।
- ট্যাবলেট: স্পর্শনির্ভর হালকা ওজনের। একটি পোর্টেবল কম্পিউটিং ডিভাইস যা সাধারণত টাচস্ক্রিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনের সংমিশ্রণ হিসেবে কাজ করে। ট্যাবলেটের ওজন হালকা এবং আকার ছোট হওয়ায় এটি সহজে বহনযোগ্য। ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ইমেইল চেকিং, গেম খেলা, ভিডিও দেখা এবং ই-বুক পড়ার জন্য এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এর নিজস্ব ব্যাটারি শক্তি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে সক্ষম করে। জনপ্রিয় ট্যাবলেট ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে অ্যাপলের আইপ্যাড, স্যামসাং গ্যালাক্সি ট্যাব এবং অ্যামাজনের কিন্ডল উল্লেখযোগ্য। তবে, ট্যাবলেট ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের তুলনায় কম ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ভারী কাজের জন্য উপযুক্ত নয়।
- স্মার্টফোন: মোবাইল ফোন হিসেবে ব্যবহৃত বহুমুখী ডিভাইস। একটি বহুমুখী মোবাইল ডিভাইস যা টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিং, কলিং, মেসেজিং, এবং অ্যাপ ব্যবহারসহ বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম। এটি মোবাইল ফোনের উন্নত সংস্করণ যা ক্যালেন্ডার, ক্যামেরা, জিপিএস, গেমিং, এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সুযোগ দেয়। স্মার্টফোনে অপারেটিং সিস্টেম যেমন অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস থাকে, যা ব্যবহারকারীদের হাজারো অ্যাপ ডাউনলোড ও ব্যবহার করতে সাহায্য করে। এর সুবিধাগুলির মধ্যে পোর্টেবল ডিজাইন, উচ্চগতি ইন্টারনেট সংযোগ এবং মাল্টিমিডিয়া সুবিধা অন্তর্ভুক্ত। তবে, স্মার্টফোনের ব্যাটারি সীমিত এবং এটি প্রায়ই আসক্তি এবং গোপনীয়তা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলো হলো অ্যাপল, স্যামসাং, শাওমি।
কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিকথা
১. আদিম যুগের গণনার যন্ত্র:
- অ্যাবাকাস (Abacus): খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে ব্যবহৃত।
- প্যাসকালাইন (Pascaline): ১৬৪২ সালে ব্লেইস প্যাসকাল উদ্ভাবন করেন।
২. প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার (১৯৪০-১৯৫৬):
- ভ্যাকুয়াম টিউব প্রযুক্তি।
- উদাহরণ: ENIAC, UNIVAC।
৩. দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৫৬-১৯৬৩):
- ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি।
- তুলনামূলক ছোট এবং দ্রুত।
৪. তৃতীয় প্রজন্ম (১৯৬৪-১৯৭১):
- ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) প্রযুক্তি।
- মাল্টি-প্রোগ্রামিং সক্ষমতা।
৫. চতুর্থ প্রজন্ম (১৯৭১-বর্তমান):
- মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার।
- পার্সোনাল কম্পিউটার।
৬. পঞ্চম প্রজন্ম (বর্তমান ও ভবিষ্যৎ):
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)।
- সুপারকম্পিউটার এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং।